মাসুদ বাবু, লালমনিরহাটঃ
লালমনিরহাটে করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ মে) দিবাগত রাতেই ওই শিক্ষককে পাটগ্রাম পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জারকোর্ট এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ওই শিক্ষকের স্থায়ী ঠিকানা রংপুরের পীরগঞ্জের
ভেন্ডাবাড়ী পলাশী এলাকায়। সেখানকার খায়রুল ইসলামের ছেলে তিনি। তবে পাটগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজে নিয়োগের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর থেকে পাটগ্রামেই থাকছেন।
তিনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি ‘সঠিক নয়’ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব, হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করার নির্দেশনা ‘ইসলামের উপরে আঘাত’ এনেছে বলেও দাবি তার। নিজেকে একজন ক্যামিস্ট দাবি করে তার পোস্টে করোনা প্রতিরোধে স্যানিটাইজারের ব্যবহার, মাস্কের ব্যবহার, ঘরে থাকা প্রভৃতি নির্দেশনাকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২) ও ৩১(২) ধারায় কলেজ শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। রাতেই ওই শিক্ষককে পাটগ্রাম পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জারকোর্ট এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই শিক্ষকের ফেসবুক আইডিতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। গত ১১ মে সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে নিজের ওয়ালে পোস্টটিতে (হুবহু) লিখেন, ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ টু এভরিবডিঃ কোলাকুলি করা, মোসাফা করা থেকে দুরে থাকা, তিনফুট দুরত্বে অর্থাৎ অসামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলা, এসমস্ত কথা কোরআন, ইসলাম ও ঈমান আমলের উপর বড় আঘাত হেনেছে। ঘনঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, মাস্ক ব্যবহার, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসায় থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন। ভাইরাস প্রতিরোধে এই সমস্ত কথা ৯৯.৫০% ভুয়া। এ্যানি বডি ওফ বাংলাদেশ এ সমস্ত কথা সত্য প্রমানিত করতে পারলে দুইলাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিব, সত্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে সে দুইলাখ ক্ষতি পূরণ দিবে ও সরকার পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহী মামলা করতে হবে। কেমিস্ট মোহ শরিফুল ইসলাম।’ পোস্টটিতে তিনি নিজের দুটি ফোন নম্বর এবং ন্যাশনাল আইডি নম্বরও জুড়ে দেন।
চীনের উহানে গেল বছরের ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটিতে ভয়ানক ছোঁয়াচে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, একে অপর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা প্রভৃতি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সারাদেশে গেল দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও। এমন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষকের এমন পোস্ট নিয়ে প্রতিবাদ জানান অনেকেই। তাদের সঙ্গেও কমেন্ট সেকশনেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ওসি সুমন কুমার মোহন্ত আরো বলেন, ওই শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার ও করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার করে স্ট্যাটাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে আগেও সতর্ক করার পরও তিনি উল্টো ধর্মান্ধ হয়ে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বাজি ধরে’ ফের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং অন্যান্যদের বিতর্ক করে আসছিলেন। যা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি প্রশাসনের নজড়ে আসে। এরপরে আমরা অধিকতর তদন্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ড করে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছি। বুধবার দুপুরে তাকে লালমনিরহাট আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে একজন শিক্ষকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে এহেন কর্মকাণ্ডের দায় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পাটগ্রাম আর্দশ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ নূর উন নবী কামাল। তিনি বলেছেন, কেউ যদি ব্যক্তিগত অপরাধ করে থাকে এই জন্য প্রতিষ্ঠান কোনো দায় নেবে না। রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামক যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। যেহেতু বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের বাইরের স্পর্শকাতর ঘটনা। এখানে প্রতিষ্ঠানের কিছু করণীয় নেই।